Saturday, 10 August 2019

কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কারে করণীয় কী আসুন জানি


কোরবানির পর পরই আমাদের প্রধান ইস্যু হয়ে দাঁড়ায় কোরবানির বর্জ্য কীভাবে অপসারণ করব, কোথায় রাখব, কীভাবে রাখব, নিয়ে নানা চিন্তা বিষয়ে আমাদের সামান্য অসচেতনতা বা অজ্ঞতার কারণে দেখা দিতে পারে পরিবেশগত নানা সমস্যা, যা আমাদের জীবনযাত্রায় অস্বস্থিকর অবস্থার সৃষ্টি করতে পারেকোরবানির পশুর বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলার দরুণ তা পচে চারিদিকে দুর্গন্ধ ছড়ায়, পরিবেশ দূষিত করেশুধু তাই নয়, নালা বা নর্দমাতে ফেলা বর্জ্য থেকে ছড়ায় নানা ধরনের রোগের জীবাণু অতিরিক্ত বর্জ্যরে চাপে নালা বা নর্দমা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে তখন অল্প বৃষ্টিতেই নর্দমার পানি আটকে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতাতখন সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এসব বর্জ্য অপসারন করতেও হিমশিম খেয়ে যায়অনেক সময় আমরা কোরবানির পশুর দেহের ভক্ষন-অযোগ্য অংশবিশেষও যেখানে সেখানে ফেলে রাখি নগর কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর না হলে সেসব অংশ পচে উৎকট বাজে ধরণের দুর্গন্ধ ছড়ায়, যা শ্বসনের সাথে আমাদের দেহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে নানা রোগ সৃষ্টি করেনগর কর্তৃপক্ষ অবশ্য প্রতি কোরবানি ঈদের পূর্বেই বর্জ্য অপসারন সম্পর্কে নির্দেশনা, জনসচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা চালায়তাছাড়া টেলিভিশন, প্রিন্ট মিডিয়াসহ প্রায় সকল গণমাধ্যমেই কম-বেশি প্রচারণা চালানো হয়দুঃখজনক হলেও সত্য, আমরা সেসব বিষয় ততটা আমলে নিই না যার দরুণ আমরাই সম্মুখীন হই নানা সমস্যারতবে যদি কোরবানির বর্জ্যকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা যায় তাহলে পরিবেশও থাকবে দূষণমুক্ত, জনস্বাস্থ্যও থাকবে নিরাপদ 


আসুন কোরবানির পরে অবশ্যই করণীয় বিষয়গুলো জেনে নেই।


বর্জ্য অপসারণ

কোরবানির ক্ষেত্রে পশু জবেহ শেষে তার রক্ত ও শরীরের যাবতীয় উচ্ছিষ্ট যথাযথভাবে অপসারণ করা জরুরী। গরু জবাইয়ের গর্তটি মাটি দিয়ে ঢেকে দিন। গর্তের মধ্যে কিছু চুন বা ব্লিচিং পাউডার বা জীবাণুনাশক পদার্থ দেয়া যেতে পারে।আর আশেপাশে যদি কোনো বর্জ্য থাকে তাহলে তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া রক্তপানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

নাড়িভুঁড়ির উচ্ছিষ্ট

পশুর দেহ থেকে নাড়িভুঁড়ির উচ্ছিষ্ট (অর্ধহজমযুক্ত খাদ্য/গোঘাষি) বের করে যত্রতত্র ফেলে দিলে তা পচে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াবে এবং পরিবেশ দূষিত হয়ে বিভিন্ন রোগ ছড়াবে। তাই যথাযথ স্থানে ফেলতে হবে।

গরম পানি

যে স্থানটিতে পশু জবায় করবেন ওই স্থানটি সম্ভব হলে গরম পানি ঢেলে পরিষ্কার করতে পারেন অথবা ঠান্ডা পানি হলেও চলবে। তবে পানি দিয়ে স্থানটি পরিষ্কার করার পর অবশ্যই ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলে দূর্গন্ধ ছড়াবে না এবং জীবনুমুক্ত হবে।

সিটি করপোরেশন

গুরুর জবাই ও মাংস বানানোর কাজ শেষ হলে বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য নিজ নিজ সিটি করপোরেশনের দায়িত্বরত ব্যক্তিদের সাথে যোগায়োগ করতে পারেন। তারা আপনাকে সহযোগিতা করবেন।

সেভলন

বর্জ্য পরিষ্কারের পরে যে কাজটি করতে হবে সেটি হোল আপনার হাত, পা ও সারা শরীর ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। পরিস্কারের জন্য সেভলন ব্যবহার করতে পারেন

* কোরবানির আগেই বাড়ির পাশে কোনো মাঠে কিংবা পরিত্যক্ত জায়গায় একটা গর্ত তৈরি করে রাখুন।
* মাংস কাটার সময় উচ্ছিষ্টগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে এক জায়গায় রাখুন। কাজ শেষে সেগুলো গর্তে পুঁতে ফেলুন।
* পশুর ভুঁড়ি পরিষ্কারের পর সেই আবর্জনা খোলা অবস্থায় না রেখে সেই গর্তে পুঁতে ফেলুন।
* কোরবানির সব কার্যক্রমের শেষে রক্তে মাখা রাস্তাঘাট ধুয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন। জীবাণু যেন ছড়াতে না পারে সে জন্য নোংরা জায়গা পরিষ্কারের সময় স্যাভলন মেলানো পানি ব্যবহার করুন।
* যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশুর চামড়া বিক্রি কিংবা দান করতে হবে।
* শহরে যারা থাকেন তারা বিচ্ছিন্ন স্থানে কোরবানি না দিয়ে বেশ কয়েকজন মিলে এক স্থানে কোরবানি করা ভালো। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের কাজ করতে সুবিধা হয়। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কোরবানির জায়গাটি যেন খোলামেলা হয়। আর জায়গাটি রাস্তার কাছাকাটি হলে বর্জ্যরে গাড়ি পৌঁছাতে সহজ হবে।
* যেসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের গাড়ি পৌঁছানো সম্ভব নয় বা দেরি হবে, সেসব স্থানে বর্জ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হবে।
কোরবানির পর আমাদের সচেতনতাই পারে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ বজায় রাখতে। আমরা যেন শুধু পশু কোরবানির মাধ্যমেই ত্যাগ শব্দটি সীমাবদ্ধ না রাখি।


শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios:

আপনার একটা সুন্দর মতামত দিন